মাদারীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১৯

ভয়াবহ এক বাস দুর্ঘটনার সাক্ষী হলো পদ্মাসেতুর এক্সপ্রেসওয়ে। রোববার (১৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের ঢাকাগামী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শিবচরের এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকায় সড়ক থেকে ছিটকে সংযোগ সড়কের উপর পড়ে। এসময় ঘটনাস্থলেই মারা যায় ১৪ জন। শিবচরের হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যু হয় ৩ জনের এবং ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পথে মারা যায় আরো ২ জন।
দুর্ঘটনায় মোট ১৯ জনের প্রানহানি ঘটেছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩০ জন। তাদের মধ্যে ২৫ জন গুরুতর আহত। বাসটিতে ৫৪ টি আসন রয়েছে। তাতে যাত্রী ছিল কমপক্ষে ৬০ জন। এছাড়া তার পাশে পৃথক সড়কদুর্ঘটনায় আর একজনের মৃত্যু হয়েছে কিন্ত তার পরিচয় এখনো জানাযায়নি।
সম্পর্কিত খবর
এদিকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহত সকলের পরিচয় সনাক্ত করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মাদারীপুর জেলা প্রশাসন মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এবং নিহতের পরিবারকে ২৫ হাজার ও আহতদের চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা দেয়া হচ্ছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে হাইওয়ে পুলিশের এডিশনাল আইজি সাহাবুদ্দিন খান, হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি হাবিবা বিনতে সালমা, ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলামসহ স্থানীয় জেলা প্রশাসন
মাদারীপুর পুলিশ সুপার, শিবচর হাইওয়ে থানা এবং ফায়ার সার্ভিস সূত্র এ তথ্য জানা গেছে। খুলনা থেকে রোববার ভোরে ইমাদ পরিবহনের বাসটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। পথে বাগেরহাট, গোপালগঞ্জসহ সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রী তোলে বাসটি। সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে শিবচরের কুতুবপুর এলাকার এক্সপ্রেসওয়েতে এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। এসময় বাসটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে।
নিহতদের মধ্যে শিবচরে থাকা ১৭ মরদেহের মধ্যে ১৭ টির পরিচয় শনাক্ত করেছে উপজেলা প্রশাসন। নিহতরা হলেন, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিতোডাঙ্গা গ্রামের সৈয়দ মুরাদ আলীর ছেলে মো: ইসমাইল(৩৮), গোপালগঞ্জের গপিনাথপুর গ্রামের তৌয়ব আলীর ছেলে হেদায়েত মিয়া বাহার(৪২),নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার কালনা গ্রামের বকু সিকদারের ছেলে ফরহাদ সিকদার (৩০), গোপালগঞ্জ সদরের শান্তি রঞ্জন মন্ডলের ছেলে অনাদী মন্ডল(৪২), নিহত অনাদি মন্ডল পরিবার পরিকল্পনার উপ-পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। গোপালগঞ্জে সরকারের বনগাও এলাকার সামচুল শেখের ছেলে মোস্তাক আহমেদ(৩০),গোপালগঞ্জ সদরের ছুটকা গ্রামের নশর আলী শেখের ছেলে সবজি শেখ,গোপালগঞ্জ সরদরের পাচুরীয়া গ্রামের মো: মাসুদের মেয়ে সুইটি আক্তার(২২), গোপালগঞ্জর টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কাঞ্চন শেখের ছেলে মো: কবির শেখ,গোপালগঞ্জ সদরের আবু হেনা মস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি(২০), গোপালগঞ্জ মুকসুদপুর উপজেলার আমজাদ আলীর খানের ছেলে মাসুদ খা(৩২),খুলনার সোনাডাঙার শেখা আহমেদ আলী খানের ছেলে শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন(৪২), খুলনার চিত্ত রঞ্জন মন্ডলের ছেলে চিন্ময় প্রসন্ন মন্ডল, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পরিমল সাধুর ছেলে মহাদেব কুমার সাধু, খুলনার টুটপাড়ার শাজাহান মোল্লার ছেলে আশরাফুল আলম লিংকন, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সখীপুর গ্রামের আমজেদ আলী সরদারের ছেলে রাশেদ সরদার, ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের আলী আকবরের ছেলে জাহিদের লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এছাড়াও শিবচরের পাঁচ্চর এলাকার বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি আছেন সাইদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, আরিফ শেখ, মো.মাসুদ, হানিফসহ কয়েকজন। দূর্ঘটনার পর তাদের উদ্ধার করে শিবচর পাঁচ্চর এলাকার বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থেকে আসা যুবক উজ্জল বলেন,'শুরু থেকেই বাস দ্রুত গতিতে চলছিল। এক্সপ্রেসওয়েতে যাত্রীদের অনেকেই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিল। কেউ চোখ বন্ধ করে ঝিমুচ্ছিল। দূর্ঘটনার সময় কিছুই টের পাইনি। যখন জ্ঞান ফেরে দেখি চারপাশে রক্ত এবং লাশ। উঠে বসতে গেলে মাথা ঘুরে পড়ে যাই। পরে কিছুটা সুস্থ্যবোধ করলে চারপাশে বোঝার চেষ্টা করি। তখন টের পাই ভয়াবহ দূর্ঘটনা ঘটে গেছে! সড়ক থেকে গাড়ি উল্টে নিচে পরে দূমড়ে-মুচড়ে গেছে।
মাদারীপুর পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানিয়েছেন,'অতিরিক্ত গতির কারণেই দূর্ঘটনাটি ঘটেছে। বেপরোয়া গতি ও চালকের ঘুম ঘুম অবস্থায় চালানোর কারণেই বাসটি এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায়। দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি সরাতে ঘটনাস্থলে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, এই ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে । এবং নিহতের জন্য ২৫ হাজার ও আহতদের চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা দেয়া হবে।