দ.আফ্রিকায় সড়ক দুর্ঘটনা: ফেনীর নিহত ৪ প্রবাসীর দাফন সম্পন্ন

দক্ষিণ আফ্রিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ফেনীর ৬ প্রবাসীর মধ্যে ৪ জনের মরদেহ নিজ নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে তাদের দাফন করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চার জনের মরদেহ গ্রহণ করেন স্বজনেরা। বিষয়টি ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান নিশ্চিত করেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের শরীয়ত উল্লাহর ছেলে ইসমাইল হোসেন (৩৮), দাগনভূঞার মোমারিজপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান মিলনের ছেলে দ্বীন মোহাম্মদ রাজু (৩৪), একই উপজেলার দক্ষিণ নেওয়াজপুর গ্রামের সিরাজ উল্লাহর ছেলে মোস্তফা কামাল পুপেল (৪০), সোনাগাজী উপজেলার চর মজলিশপুর গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে আবুল হোসেন (৩৫) ও আবুল হোসেনের ছেলে নাদিম হোসেন। তবে নাদিম জন্মগতভাবে আফ্রিকার নাগরিক হওয়ায় তার মরদেহ দক্ষিণ আফ্রিকায় দাফন করা হয়েছে।
সম্পর্কিত খবর
এ ছাড়া ওই ঘটনায় আহত দাগনভূঞা উপজেলার রামানন্দপুর গ্রামের বাহার মিয়ার ছেলে আনিসুল হক মিলন (৩৮) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে মারা যান। তার মরদেহ গতকাল দেশে এসে পৌঁছায়নি বলে নিহতের ভাই সাইদুল হক রিমন জানিয়েছেন।
ফেনী সদরের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেনের মরদেহ বিমান বন্দর থেকে বৃহস্পতিবার রাতে বুঝে নিয়েছেন তাঁর ছোট ভাই মো. নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে জানাজা শেষে তার ভাইয়ের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
ইসমাইলের বাবা শরীয়ত উল্লাহ বলেন, ‘১০ বছর ধরে ইসমাইল দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাস করছিলেন। দুই মাস পর দেশে আসার কথা ছিল। সবাই সেই অপেক্ষাতেই ছিলাম। দেশে ফিরলে তাকে বিয়ে করাব। দুর্ঘটনায় সে মারা যাওয়ায় আমরা সবাই ভেঙে পড়েছি।’
সোনাগাজীর চর মজলিশপুরের আবুল হোসেনের মরদেহ বুঝে নিয়েছেন তার বাবা জামাল হোসেন। তিনি বলেন, ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন আবুল হোসেন। পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে। ১৩ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে এক স্থানীয় নারীকে বিয়ে করলেও পরে বিচ্ছেদ হয়। তাদের একমাত্র সন্তান নাদিম হোসেনসহ তিনি ওই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। নাদিম আফ্রিকার নাগরিক। তাই সেখানেই তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে আবুল হোসেনের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
দাগনভূঞার মোমারিজপুরের দ্বীন মোহাম্মদ রাজুর মরদেহ বিমানবন্দর থেকে বুঝে নিয়েছেন বাবা আব্দুল মান্নান মিলন। রাজুর চাচাতো ভাই আব্দুল আউয়াল নাজমুল বলেন, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে রাজু আহম্মদের জানাজা মাতুভূঞার করিমউল্যাহ হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
দাগনভূঞার দক্ষিণ নেওয়াজপুরের মোস্তফা কামাল পুপেলের মরদেহ বুঝে নিয়েছেন তার ছোটভাই মোস্তফা জামাল নওফেল। তিনি বলেন, মরদেহ বাড়ি আনার পর সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রায় এক যুগ বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছিলেন কামাল। আগামী রোজার ঈদে বাড়ি আসার কথা ছিল তার। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাও দাগনভূঞার রামানন্দপুরের আনিসুল হক মিলনের বাবা বাহার মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে দুই মাস আগে আফ্রিকায় নতুন ব্যবসা শুরু করেছে। সে জন্য ব্র্যাক ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকা লোন নিয়ে তার কাছে পাঠিয়েছি। এখন ছেলে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। কীভাবে পরিশোধ করব এই টাকা?’
মিলনের ছোট ভাই সাইদুল হক রিমন আরও বলেন, ‘দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, মিলনের মরদেহ শুক্রবার বিকেলে দেশে আসার কথা রয়েছে।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন থেকে বাংলাদেশে আসার জন্য জোহানেসবার্গ বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন আনিসুল হক মিলন। তাকে এগিয়ে দিতে একটি মাইক্রোবাসে করে বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন চার বন্ধু ও বন্ধুর ছেলে। পথে লরির সঙ্গে মাইক্রোবাসটির সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মিলন ছাড়া বাকি পাঁচজন মারা যান। তিন দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিলনও মারা যান। ওই দুর্ঘটনায় আহত আরেকজন স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।