জীবনের মেরুকরণের গল্পটায় বুঝি এমন

#ঢাকার_রহিম_সাহেব_এবং_তার_পরিবার।
রহিম সাহেব একজন ইন্জিনিয়ার ঢাকায় একটা ভালো প্রাইভেট কোম্পানিতে এক লাখ টাকা বেতনে জব করে, তার এক বউ ও এক বাচ্চা আছে। রহিম সাহেব একজন লেখাপড়া জানলেওলা ডিগ্রি আছে এমম মেয়েকে বিয়ে করে।
সম্পর্কিত খবর
রহিম সাহেব ২০ হাজার টাকা মাসিক ভারা হিসেবে একটি ফ্লাটে পরিবার সহ থাকেন। রহিম সাহেব এবং তার স্ত্রী ডিজিটাল সামগ্রী যেমন ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি ব্যবহার করেন।
রহিম সাহেব বাসায় আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য ৫ লাখ টাকা ঋণ নেন মাসিক ১৫০০০ টাকা হারে কিস্তিতে এবং তার ৩ লাখ টাকা ব্যালেন্সের একটা ক্রেডিট কার্ড আছে।
রহিম সাহেব ৬০ টাকা কেজি মূল্যের চাল ক্রয় করেন সপ্তাহের বাজার লিস্টে মাছ, মাংস, মুরগী হামেশায় বিদ্যবান।
রহিম সাহেব অফিস করেন ১২ঘন্টা, রহিম সাহেবের কোন প্রাইভেট কার বা প্রাইভেট জানবহন নেই। পাবলিক বাসে যাওয়া আসা করে, সেখানে তার প্রতিদিন ৩-৪ ঘন্টা ব্যায় হয়। সপ্তাহে একদিন তার ছুটি, শুধু সেই দিনটাই একটু পরিবার ও বাচ্চা কে সময় দিতে পারেন। বাকিদিন গুলোতে রহিম সাহেব যখন অফিস যায় তখনও বাচ্চা ঘুমায়, আবার যখন অফিস থেকে ফিরে তখনও বাচ্চা ঘুমায়।
রহিম সাহেব মাঝে মাঝে অফিসের বসের ঝাড়িও খায়, মন খারাপ করে বাসায় ফিরলে ছোটখাটো বিষয় নিয়েও তাদের পরিবারে ঝগড়া লেগে যায়।
রহিম সাহেবের বউ যেহেতু ফেসবুক ব্যবহার করে সেহেতু একদিন রহিম সাহেবের বউ ফেসবুকে দেখে যে রহিম সাহেবের অমুক বন্ধু প্রাইভেট কার ক্রয় করে তার পরিবারের সহিত একখানা হাসিমাখা ছবি আপলোড করিয়াছেন।
এ নিয়ে রহিম সাহেবের বউ রাতের বেলায় শোয়ার বিছানায় বলেই ফেলে, ‘তোমার ঐ অমুক বন্ধু প্রাইভেট কার ক্রয় করিয়াছে, তুমি কি করলা’। ইয়া শুনিয়া রহিম সাহেব বিচলিত হইয়া বিছানা ত্যাগ করিয়া ছোফায় ঘুমাতে যায়। ইহা দেখে রহিম সাহেবের বউ ক্ষেপে গিয়ে বলে ‘ও এখন আর আমাকে ভালো লাগে না অফিসের ওই মেয়েটার কথা মনে পড়িয়াছে’। এ নিয়েও তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হয়।
রহিম সাহেব চিন্তিত কারন তার আদরের বাচ্চাটা শৈশব পাচ্ছে না, খেলার কোন মাঠ নেই, তাই সারাদিন মেবাইলে ইউটিউব দেখতে দেখতে চোখ যায় যায়। রহিম সাহেব তার পরিবারকে নিয়ে প্রায়ই বন্ধুদের পার্টিতে যায়। ওখানে রহিম সাহেব দেখে সকলের কি চাকচিক্য ময় জীবন। একদিন পার্টিতে রহিম সাহেব খেয়াল করলো তার বউর দিকে সুঠম দেহের সুন্দর এক যুবক ছেলে তাকিয়ে আছে, রহিম সাহেবের বউও কি যেন ইশারা করলো। রহিম সাহেব চিন্তায় অস্থির, না জানি তার বউ পরকিয়ায় জড়িত কিনা।
রহিম সাহেব প্রায়ই ভয়ে থাকে এ বুঝি তার জব টা চলে যাচ্ছে, কারন কিছুদিন পরপর তার কলিগের জব চলে যায়। রহিম সাহেবের ডায়াবেটিস ও হাই ব্লাড প্রেশার ধরা পড়েছে।
#গ্রামের_রহিম_সাহেব_এবং_তার_পরিবার
রহিম সাহেব গ্রামে থাকে এবং সে আন্ডার মেট্রিক্ পাশ। রহিম সাহেব বাবা মায়ের পছন্দের পাশের গ্রামের অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত মেয়েকে বিয়ে করেন। তারা পৈতৃক ভিটাতে বসবাস করে এবং তাদের একটা ৩ বছরের বাচ্চা আছে। রহিম সাহেবের চাষাবাদ যোগ্য ৫ বিঘা (১৫০ শতক) জমি আছে। তাতে ধান, আলু, সবজি, মাছ ইত্যাদি চাষাবাদ করে থাকেন।
রহিম সাহেব নিজ বাড়িতে দেশী মুরগী পালন করে তা থেকে যে ডিম পায় তা তাদের বাচ্চাকে খাওয়ায়, মাঝে মাঝে নিজেও খায়, বাজারে বিক্রিও করে। রহিম সাহেবের একখানা গাই গরু আছে, গরুর একটি বাছুর আছে তা থেকে যে দুধ পায় তা নিজে খায় এবং বাজারেও মাঝে মাঝে বিক্রি করে।
রহিম সাহেব ছাই দিয়ে দাঁত মাজে তাই তাকে পেস্টও কিনতে হয়না। ও হ্যা, রহিম সাহেবের বউ ছাই দিয়ে পানি নিঃসৃত করে সেই পানি দিয়ে কাপড় কাঁচে। মাঝে মাঝে গন্ধ সাবান ক্রয় করে গোসল করার জন্য। রহিম সাহেব বাড়ির সবজি, পুকুরের মাছ, এবং বাড়ির চালের ভাত খায়। রহিম সাহেবের মাসিক খরচ হয় ৫০০-১০০০ টাকা।
রহিম সাহেবের বাচ্চা খুব ডানপিটে, সে সারাদিন খেলে, সে সবুজ দেখে, আর এটা ওটা তৈরি করে যেমন পুরাতন টায়ার দিয়ে চাকা ঘুরানো, গাছের ডাল দিয়ে বানানো ক্রিকেট ব্যাট, ফেলে দেওয়া পলিথিন দিয়ে বানানো ফুটবল, নষ্ট বিয়ারিং আর গাছের ডাল দিয়ে ঠেলা গাড়ি। রহিম সাহেব প্রায়ই শশুর বাড়ি, বোনের বাড়ি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দাওয়াতে তার পরিবার নিয়ে ঘুরতে যায়। কারন রহিম সাহেব তো আর চাকরি করেনা যে ছুটি নিতে হবে।
দুটি গল্পের সারমর্ম বুঝার দায়িত্ব আপনার।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম