দেশে অলিখিত বাকশাল কায়েম করা হয়েছে: মঈন খান

দেশে অলিখিত বাকশাল কায়েম করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) জিয়া প্রজন্মদল আয়োজিত ‘রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘দেশে এখন রাজনীতি বলতে কিছু নেই। ‘৭২ থেকে ’৭৫ সালে লিখিত বাকশাল ছিল। এখন অলিখিত বাকশাল কায়েম করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ যা হুকুম করে, তা জনগণকে মানতে বাধ্য করে। ক্ষমতাসীনদের অস্বাভাবিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। মানুষকে চিন্তার স্বাধীনতা দিতে হবে।’
সম্পর্কিত খবর
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলে বিএনপির জন্ম ক্যান্টমেন্টে। বিএনপির জন্ম ক্যান্টমেন্টে হয়নি, জনগণের মাঝে জন্ম নিয়েছে। ধরে নিলাম, তাদের কথা সত্য। আওয়ামী লীগের জন্ম তো ক্যান্টনমেন্টে নয়। তারা কেন গণতন্ত্রের হত্যা করে? কোনো সৈনিক বা সেনাশাসক তো গণতন্ত্র হত্যা করেননি। এই আওয়ামী লীগ নিজেদের গণতান্ত্রিক দল বলে জাহির করার চেষ্টা করলেও এরা ক্ষমতায় এসেই গণতন্ত্রকে হত্যা করে।’
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ৭ কোটি মানুষের মধ্যে কতজন বিরোধিতা করেছিল? সে অজুহাত দিয়ে দেশকে আজ বিভক্ত করা হচ্ছে। এতে আওয়ামী লীগের কী উদ্দেশ্য? বিভক্ত করে রাষ্ট্রকে অস্থির করতে চায়, আর সুযোগে তারা দেশের টাকা লুট করছে, হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করছে।’
তিনি বলেন, ‘২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের কী ভূমিকা ছিল? তাদের কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল না, পালিয়ে গিয়েছিল। সেদিন যদি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন, তাহলে দেশে মুক্তিযুদ্ধ হতো না, হতো গৃহযুদ্ধ। জিয়া জাতির ক্রান্তিলগ্নে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে চলে যাননি। সম্মুখ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে ছিল ২২ পরিবার। এখন এই আওয়ামী লীগই ২২০ পরিবার সৃষ্টি করেছে। অথচ এরা দীর্ঘ বছর ক্ষমতায় থেকেও দেশের মানুষের অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। এ ধারা থেকে বের হতে না পারলে এই স্বাধীনতা অর্থহীন।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বললে রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলা হয়। কিন্তু বিএনপি তো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলে না। যারা রাষ্ট্রকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে, রাষ্ট্রের অর্থ লুটপাট করছে, জনগণের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে বিএনপি তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে। আর এ অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলার অপরাধেই আমাদের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক মামলা; ৩৫ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।’
সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘দেশের মানুষ অসহায় অবস্থায় আছে। দিনমজুর, শ্রমিক এবং কর্মী থেকে নেতা সবাই আজ উদ্বিগ্ন। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায়, জাতি অস্থিরতায় থাকে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বাইরে কি স্বাধীনতার জন্য কেউ রক্ত দেয়নি? শ্রমিক, ছাত্র ও মেহনতি মানুষ সে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। শুধু একটি পতাকার জন্য কি আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি? যে গণতন্ত্র ও স্বাধিকারের জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি, আওয়ামী লীগ সে রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছে। স্বাধীনতার পর এই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই গণতন্ত্রকে বস্তাবন্দি করে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিল।’
সভায় বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বক্তব্যে বলেন, “সংসদ আজ আওয়ামী ক্লাবে পরিণত হয়েছে। এমপিরা দেশ ও জনগণের স্বার্থে কথা বলছে না, শুধু শেখ হাসিনার বন্দনা। এমপিরা আজ বলছেন, ‘শেখ হাসিনাকে দেশের মানুষ আজীবনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়।’ প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিতে চাই, যারা আপনার পিতার বেশি বন্দনা করেছিল, তারা তার মৃত্যুর পর লাশটিও দেখতে যায়নি।”
তিনি বলেন, ‘৭২ থেকে ‘৭৫-এর মতো দেশ এখন এক ব্যক্তির শাসন ও নির্দেশে চলছে। ইউএনও, এসপি ও সরকারি সকল কর্মকর্তার নিয়োগ, বদলি সব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে।’
আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান শাহীনুর মল্লিক জীবনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন রুবেলের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ।