বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য-ম্যুরাল রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: পুলিশ সদর দপ্তর

সারাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সব নির্মিত ও নির্মাণাধীন ম্যুরাল ও ভাস্কর্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে একটি প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (কনফিডেন্সিয়াল) মো. হায়দার আলী খানের স্বাক্ষরে পাঠানো প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন।
সম্পর্কিত খবর
প্রতিবেদনে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর যত ম্যুরাল ও ভাস্কর্য আছে তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, গোয়েন্দা বাহিনী নিয়োগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আদালতে এ সংক্রান্ত রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ড. বশির আহমেদ।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বাশার প্রতিবেদনটির বরাত দিয়ে জানান, দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মোট এক হাজার ২২০টি ভাস্কর্য ও ম্যুরাল আছে এবং সেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ২৪ ঘণ্টা মোতায়েন আছে।
মূর্তি ও ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্কের মাঝে সারা দেশের সেসব জেলা-উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে সেসবের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ গ্রহণে গত ৭ ডিসেম্বর নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ নির্মাণাধীন অন্যান্য ম্যুরালেরও নিরাপত্তায় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয় আদালত।
গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি একাত্তরের যে দিনটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন সেই ৭ মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ ঘোষণা করে এক মাসের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সেই সাথে মুজিববর্ষের মধ্যেই দেশের সব জেলা-উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন।
ওই আদেশের অগ্রগতি বিষয়ে একটি প্রতবেদন গত ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। এতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ৩৮০টি উপজেলা ও ৬৩টি জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স স্থাপন করে কমপ্লেক্সের সামনে জাতির পিতার ম্যুরাল স্থাপন করেছে। এছাড়া কিছু নির্মাণাধীন রয়েছে।
সে দিন কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙার বিষয়টিকে জঘন্য ঘটনা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও ভাস্কর্যগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্য পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট ডিসি ও এসপিদের প্রতি নির্দেশনার দেয়ার আর্জি জানান রিটের পক্ষের আইনজীবী। পরে হাইকোর্ট আদেশ দেয়।
রাজধানীতে জাতির পিতার একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা নিয়ে সম্প্রতি বিতর্কের সৃষ্টি হয়। দেশে ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন কয়েকটি ইসলামিক রাজনৈতিক দলের নেতা। এমন পরিস্থিতির মাঝে গত ৪ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে রাতের আঁধারে জাতির পিতার নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। তার আগে ২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে মধুসূদন দে স্মৃতি ভাস্কর্যের একটি অংশ কে বা কারা ভেঙে ফেলে।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে মন্তব্যের জন্য রাষ্ট্রদোহের অভিযোগে ৭ ডিসেম্বর হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী, খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট মশিউর মালেক ঢাকার মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদারের আদালতে মামলাগুলো দায়ের করেন।
গত ৮ ডিসেম্বর বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের শুনানি নিয়ে জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙা ও অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। একই সাথে ভাস্কর্য, ম্যুরাল, প্রতিকৃতি ও স্ট্যাচুর পক্ষে সচেতনতা গড়তে ইসলামি ফাউন্ডেশন ও ইসলামি খতিবকে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালাতে বলে আদালত।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস