দুবাই পালাতে চেয়েছিলেন গোল্ডেন মনির

নব্বইর দশকে কাপড়ের দোকানে সেলসম্যান হিসেবে কর্মজীবনের শুরু করেন মো. মনির হোসেন। এরপর ক্রোকারিজ ও লাগেজ ব্যবসা থেকে জড়িয়ে পড়েন স্বর্ণ চোরাকারবারে। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে হয়ে যান হাজার কোটি টাকার মালিক। মনির হোসেন থেকে হয়ে ওঠেন গোল্ডেন মনির।
শনিবার (২১ নভেম্বর) র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অভিযানে সকালে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার নিজ বাসা থেকে আটক করা হয় তাকে। সকালেই দেশ ছাড়ার কথা ছিল গোল্ডেন মনিরের। তিনি দুবাই পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
সম্পর্কিত খবর
তিনি আরও বলেন, ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় দুই শতাধিক প্লট, ফ্ল্যাটের মালিক গোল্ডেন মনির। রাজউকের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অসংখ্য প্লট হাতিয়ে নেন তিনি। তবে প্রাথমিকভাবে ৩০টি প্লট ও ফ্ল্যাটের কথা স্বীকার করেছে মনির। গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে দুদক ও রাজউকের মামলা রয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়েছে।
লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে, অস্ত্র আইনে ও বৈদেশিক মুদ্রা রাখায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করবে র্যাব। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে দুদক, সিআইডি, বিআরটিএ, এনবিআর, রাজউকসহ সংশ্লিষ্টদের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হবে।
জানা গেছে, গোল্ডেন মনির নিজের নিরাপত্তায় লাইসেন্সকৃত দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখতেন। এর মধ্যে একটি পিস্তল ও একটি শর্টগান।তবে বৈধ দু’টি অস্ত্রের পাশাপাশি একটি অবৈধ পিস্তলও তার দখলে ছিল। আটকের সময় তার বাসা থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়। বিদেশ যাওয়ার জন্য নিজের লাইসেন্সকৃত দু’টি অস্ত্র বাড্ডা থানায় জমাও দিয়েছিলেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গোল্ডেন মনির দুবাইতে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এজন্য তার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল। শনিবার গ্রেফতার এড়াতে পারলেই তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতেন। এদিন বেলা ১১টার দিকে অ্যামিরাত এয়ারলাইনসের (EK-585) ফ্লাইটে মনিরের দুবাই যাওয়ার কথা ছিল।
এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম বলেন, গোল্ডেন মনিরের অস্ত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।
গোল্ডেন মনিরের ছেলে মোহাম্মদ রাফি হোসেন বলেন, বাবা প্রায়ই চিকিৎসার জন্য দুবাই যান। এবারো চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন,এজন্য তার ফ্লাইট কনফার্ম ছিল। এর আগেই র্যাব তাকে আটক করে ফেলে। তবে মনিরের শারীরিক সমস্যা বা চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিয়ে পারেননি রাফি হোসেন।
বাবার অভিযোগের বিষয়ে রাফি বলেন, আমার বাবা নির্দোষ। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বাবার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে সব ভিত্তিহীন। তিনি একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। আমরা আইনিভাবে সব মোকাবিলা করবো। সেখানেই প্রমাণ হবে বাবা দোষী কিনা।
গোল্ডেন মনিরকে আটকের পর র্যাব-৩ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে কারো সম্পৃক্ততা পেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানায় র্যাব।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এমএস