রেমিট্যান্সে পতন থামল নভেম্বরে

সদ্য শেষ হওয়া নভেম্বর মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কিছুটা বেড়েছে। এ মাসে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ৩০ হাজার (১.৫৯ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। আর আগের মাস অক্টোবরের চেয়ে বেশি ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার রেমিট্যান্স প্রবাহের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, দুই মাস পর প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্স। আগের দুই মাস সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে যথাক্রমে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ এবং ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আর গত বছরের নভেম্বরে এসেছিল ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।
সম্পর্কিত খবর
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলেছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে অবৈধ হুন্ডি বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের ফলে নভেম্বরে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। তবে, এই রেমিট্যান্স মোটেই সন্তোষজনক নয়। বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়াতে হুন্ডি বন্ধে আরও কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৮৭৯ কোটি ৩১ লাখ (৮.৭৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।
২০২১ সালের এই পাঁচ মাসে ৮ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। জুলাইয়ে এসেছিল ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার; যা ছিল আগের ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে বেশি ছিল ১২ শতাংশ। আগস্টে আসে ২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। ওই দুই মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ছিল ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।
কিন্তু সেপ্টেম্বরে এসে হোঁচট খায়। ওই মাসে বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন; যা ছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার এসেছিল। পরের মাস অক্টোবরে এসেছিল ১৫২ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। যা ছিল আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
আমদানি কমার পরও রেমিট্যান্সের ধীরগতির কারণে রিজার্ভ কমে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের (৩ হাজার ৪০০ কোটি) নিচে নেমে এসেছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে এই সূচক ছিল ৩৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলঅর।
নভেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে প্রায় ১২৯ কোটি ডলার। আর ৯টি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫২ লাখ ৪০ হাজার ডলার।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকিং চ্যানেলের বদলে অবৈধভাবে হুন্ডিতে অর্থ পাঠানোর কারণ, সেখানে ডলারের দর বেশি পাওয়া যায়। প্রতি ডলারের বিপরীতে তিন থেকে চার টাকার ব্যবধান অনেককেই এভাবে অর্থ পাঠানোতে আগ্রহী করছে।’