নারীদের ভাবনায় স্বাধীনতার ৫৩ বছর

স্বাধীনতা; বাঙালির জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। আজ ২৬ মার্চ, বাঙালির স্বাধীনতা দিবস। একটি জাতির স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাস নেওয়ার গোড়াপত্তন হয়েছিল এই দিনে। এই স্বাধীনতা এক সুদীর্ঘ সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস। যে ইতিহাসে পুরুষের পাশাপাশি নারীর বুদ্ধি-বিচক্ষণতা, আন্তরিকতা ও সাহসের ফল আজকের স্বাধীনতা! স্বাধীনতার ৫৩ বছরে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন সানজিদা জান্নাত পিংকি
সম্পর্কিত খবর
স্বাধীনতা মানব মনের খোলা জানালার ন্যায়,সেই জানালার দুটো কপাট খুললেই চোখের সামনে সকল বাস্তবতা উঠে আসে, বর্তমান বাংলাদেশের চিত্র পুতুল নাচের ন্যায় কাহিনি বলতে বলতে সামনে আসে! আমরা সকলেই স্বাধীন তবুও কোথা থেকে পরাধীনতার অদৃশ্য শেকল টেনে ধরে আছে আমাদের, সব দেখেও যেন চোখ বন্ধ হয়ে আছে!
চার অক্ষরের স্বাধীনতা শব্দটা প্রতিটা বাঙালি যেন হৃদয়ে সযত্নে লালন করে,ধারন করে তার ইতিহাস।তাইতো কাকডাকা ভোরেই অঙ্গে সবুজ, লাল রং জড়িয়ে ভীড় জমায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে, যেখানে ঘুমিয়ে আছেন দেশের সূর্য সন্তানেরা। স্বাধীনতা মানেই এক বিশাল দায়িত্ব। নিজ মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে হবে সকল ধরনের বহিরাগত কুদৃষ্টি থেকে৷ অসাম্প্রদায়িক আর বৈষম্যহীনতা বজায় রাখতে হবে এই সুন্দর বাংলাতে। আধুনিক বিশ্বের সাথে বাংলাদেশকে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিতে জেগে উঠতে হবে বর্তমান প্রজন্মকেই। ঠিক তেমনি দেশের নারীদের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষায় হতে হবে সচেষ্ট। শুধু বছরঘুরে শ্রদ্ধা আর আনুষ্ঠানিকতা নয় এর যথাযথ গুরুত্ব এ প্রজন্ম ধারণ করতে পারলেই স্বাধীন দেশ ও স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা সার্থক।
তাহমিনা তানজিল তুলি ৪র্থ বর্ষ,বাংলা বিভাগস্বাধীনতা রক্ষায় তারুণ্যের জাগরণ জরুরি
স্বাধীনতা মানে অন্যের অধীনে না থাকা। যেখানে সবকিছু নিজস্ব; নিজস্ব জাতি,নিজস্ব ভূখন্ড সবকিছু। আমরা বাংলাদেশী, আমাদের সবকিছু ঘিরেই রয়েছে স্বাধীনতা, স্বাধীনতা লাভের জন্য বীর বাঙালি হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলো। ২৬শে মার্চ আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় সেই কালরাতের ভয়াবহ গণহত্যার ইতিহাস। যা আজও অশ্রুসিক্ত করে প্রতিটা বাঙালির মনকে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন দিয়ে শুরু হয় স্বাধীনতার যাত্রা। স্বাধীন হয়ে জন্ম নিয়েও বাঙ্গালীরা স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারেনি। হাজারো বাঁধা পেরিয়ে,লাখো প্রাণের বিনিময়ে প্রাপ্ত আজকের এই স্বাধীনতা।আজ আমাদের রয়েছে ভাষার স্বাধীনতা,কর্মের স্বাধীনতা,পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বাধীনতা। সরকার ও জনগনের সম্মিলিত চেষ্টায় আমরা আমাদের সেই অস্তিত্ব গাথা বাংলাকে খুঁজে পেয়েছি যার জন্য বাংলার বীরত্তের শ্রেষ্ঠ অধ্যায়ের রচনা হয়েছে। স্বাধীনতা অর্জন হলেই চিরস্থায়ী হয় না।তাই স্বাধীনতা রক্ষায় তারুণ্যের জাগরণ অনেক বেশি প্রয়োজন। আমাদের হতে হবে মুক্ত।কারণ স্বাধীনতা মানেই মুক্তি।
রেবেকা ইয়াসমিন উর্মি ২য় বর্ষ, ইংরেজি বিভাগ
বাঙালিকে লক্ষ্যে অটুট থাকতে হবে
স্বাধীনতা দিবস। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর যে বিজয় এসেছিলো ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর, তার শুরুটা হয়েছিল এই দিনেই। সে সময় দেশকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছিল তরুণরা। এই দিনে অভিন্ন এক লক্ষ্য নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এক হয়েছিল। যেখানে তরুণদের ভূমিকা ছিল অবিশ্বাস্য। স্বাধীনতা অর্জনের অনেক বছর পেরিয়েছে বাঙালি জাতি। আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছি বিশ্ব দরবারে। কিন্তু আদৌ কি আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌছাতে পেরেছি? দূর্নীতি,অরাজকতা,অবিচার,খুন,গুম ইত্যাদি এখন আমাদের উন্নয়নের পথের কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেকারত্বের সমস্যা আমাদের সমাজকে গ্রাস করেছে। এগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অদম্য চেষ্টা আমাদের মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের সারথি হয়ে থাকবে। আমাদের উচিত ধর্ম,বর্ণ,দল-মত নির্বিশেষে নিজ জায়গা হতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। তারুণ্যের শক্তিই সমাজকে সামনে অগ্রসর করাতে পারে। তাদের শিক্ষা দ্বারা সামনে ধাবিত করতে প্রত্যকের পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
আমার মতে, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারলেই আমরা দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে সক্ষম হব।
নিশাত লুবনা মিতু ১ম বর্ষ, ফার্মেসি বিভাগ
উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে তারুণ্যমুখী হতে হবে
২৬শে মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস৷ লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই
স্বাধীনতা, এই দিনে জাতি স্মরণ করছে বীর শহিদদের৷ স্বাধীনতা দিবস তাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে মুক্তির প্রতিজ্ঞায় উদ্দীপ্ত হওয়ার ইতিহাস৷ আমাদের মাতৃভূমি বাংলাকে স্বাধীন করার জন্য ত্যাগ করতে হয়েছে অনেক কিছু, দিতে হয়েছে লাখ প্রাণের তাজা রক্ত। পাকিস্তানি শাসনের শৃঙ্খল থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার সেই গৌরব ও অহংকারের দিন ২৬ মার্চ। এই স্বাধীনতা অর্জন করার মধ্য দিয়ে তারুণ্যের স্ফুলিঙ্গ প্রজ্বলিত হয়েছিল সেদিন। স্বাধীনতা পরবর্তী এই সময়ে দেশের সার্বিক অর্জনে তরুণরা বরাবরই সম্মুখ সারির যোদ্ধা। রাষ্ট্রবিরোধী যেকোনো শক্তির বিরুদ্ধে তরুণদের সবার আগে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ার নজির অহরহ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিপূর্ণ এই তারুণ্য অগ্রযাত্রার দিনগুলোতেও তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায়। কিন্তু আমাদের বড় একটি অংশ আজও বেকারত্বের বোঝা বয়ে চলছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এই সামগ্রিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে সরকারকে তারুণ্যমুখী হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
নাতাশা মনি ১ম বর্ষ,আইন বিভাগলেখা: শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।