• সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩, ৬ চৈত্র ১৪২৯
  • ||

প্রাথমিকের বৃত্তি: ফল বদলে বাদ পড়াদের কান্না

প্রকাশ:  ০৩ মার্চ ২০২৩, ১৪:৩১
নিউজ ডেস্ক

বাংলা একাডেমির একজন কর্মকর্তা জানান, তার মেয়ে এবার রাজধানীর উত্তরার একটি বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা দিয়েছিল। পরীক্ষাও ভালো হয়েছিল। গত মঙ্গলবার প্রথমবার প্রকাশিত (পরে স্থগিত) ফল অনুযায়ী তখন তার মেয়ে বৃত্তি পেয়েছিল; কিন্তু পরদিন বুধবার যখন সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়, তাতে তার মেয়ের নাম নেই। এতে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। বুধবার রাতে কান্নাকাটি করেছে। কাঁদতে কাঁদতে তার জ্বর চলে এসেছে।

রাজধানীর লালবাগের নবাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৬০ শিক্ষার্থী। স্থগিত করা ফলাফলে বিদ্যালয়টি থেকে পাঁচজন বৃত্তি পেয়েছিল, যাদের সবাই মেধা কোটায় (ট্যালেন্টপুল)। বিদ্যালয়টির এক শিক্ষক জানান, এ নিয়ে তাদের মন খারাপ ছিল। তবে সংশোধিত ফলে তাদের বিদ্যালয় থেকে ১৭ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে, যাদের মধ্যে ১৬ জন মেধা কোটায়। আর একজন সাধারণ কোটায়। এখন তারা খুশি।

শুধু এ দুটি ঘটনা নয়, সংশোধিত ফলাফলে সারা দেশেই এ রকম অনেক পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে। এতে যারা বাদ পড়েছে, তারা হতাশ। আর যারা নতুন করে বৃত্তির তালিকাভুক্ত হয়েছে, তারা খুশি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সার্বিকভাবে এ ঘটনা একটি খারাপ নজির হয়ে থাকল। যা শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সংশোধিত তালিকায় সারা দেশে মোট কতজন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে, সেই সংখ্যা জানাতে পারেননি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

শিক্ষাবিদদের পরামর্শ উপেক্ষা করে গত বছরের শেষ সময়ে আকস্মিকভাবে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর গত মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৃত্তি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। কিন্তু ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণ দেখিয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় এই ফল স্থগিত করা হয়। পরে বুধবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে স্থগিত করা ফলাফল পুনর্যাচাই করে প্রকাশ করা হয়।

প্রাথমিক বৃত্তির মোট কোটা ৮২ হাজার ৫০০টি। তবে এবার মোট ৮২ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। এর মধ্যে মেধা কোটায় ৩৩ হাজার ও সাধারণ কোটায় ৪৯ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে।

শূন্য থেকে চার, কোথাও এক থেকে শূন্য

বুধবার রাতে সংশোধিত ফল প্রকাশের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়েই ফল পরিবর্তন হয়েছে। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বৈখেরহাটী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, স্থগিত করা ফলাফলে তাদের বিদ্যালয় থেকে একজনও বৃত্তি পায়নি। কিন্তু সংশোধিত ফলাফলে তাদের বিদ্যালয় থেকে দুজন মেধা কোটায় ও দুজন সাধারণ কোটায় বৃত্তি পেয়েছে।

তবে কোনো কোনো বিদ্যালয় প্রথম দফায় বৃত্তি পেলেও সংশোধিত ফলে একজনও বৃত্তি পায়নি। যেমন রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চবিদ্যালয় (এখানে প্রাথমিক স্তরে পড়ানো হয়)। বিদ্যালয়টির একজন শিক্ষক জানান, স্থগিত করা ফলাফলে তাদের এক ছাত্রী বৃত্তি পেয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত ফলাফলে কেউ বৃত্তি পায়নি। এটি যেমন তাদের জন্য বিব্রতকর, তেমনি ওই শিশুর জন্যও মন খারাপের বিষয়।

অবশ্য অনেক বিদ্যালয়ে সংশোধিত তালিকাতেও একই ফল রয়েছে। যেমন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের সিরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম জানান, তাদের বিদ্যালয় থেকে প্রথমেও সাত শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছিল। সংশোধিত তালিকাতেও ওই সাতজনই আছে।

‘শিশুর ক্ষতির দায় নেবে কে’

সংশোধিত তালিকায় কোটা পরিবর্তনের ঘটনাও ঘটেছে। যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, তার মেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ধানমন্ডি শাখা থেকে স্থগিত তালিকায় মেধা কোটায় বৃত্তি পেয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত তালিকায় তার নাম সাধারণ তালিকায় দেখানো হয়েছে। এতে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন ‘আমাদের ব্যবস্থাপনার ত্রুটির জন্য আমার মেয়েসহ যেসব শিশুর ক্ষতি হলো, এর দায় নেবে কে?’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই ভুলের ঘটনা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) মোছা. নূরজাহান খাতুনের নেতৃত্বে একটি কমিটি তদন্ত করছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রগুলো বলছে, অধিদপ্তরের কারিগরি দলের ভুলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। ফলাফল তৈরির সময় একাধিক উপজেলার কোড একই হওয়ায় সমস্যাটি হয়েছে।

বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলের ভুল নিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার। তিনি বলেন, ‘দায়বদ্ধতা, দলগত সংহতি (টিম স্পিরিট) ও নজরদারি থাকলে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে এমনটি হওয়ার কথা নয়।

এখন কেউ ঘটনার ভেতরে ঢুকতে চায় না, কড়া নজরদারি করতে চায় না, ভাসা–ভাসাভাবে কাজ করে সস্তা জনপ্রিয়তায় আনন্দ পায়। প্রধান লক্ষ্য থাকে কোনোভাবে দিন পার করে যাওয়া।

ব্যর্থতাকে অপমান মনে করে না। আরও ভাবে, রাজনৈতিক আশ্রয় আছে, কোনো অসুবিধা নেই। ফলে কাজে গাফিলতি হয়, বিভ্রাট ঘটে। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল নিয়েও তা–ই ঘটেছে।’

প্রাথমিক,বৃত্তি
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close