• শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০ চৈত্র ১৪২৯
  • ||

ডেল্টা হেলথের অর্থ আত্মসাৎ, দুদকে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ

প্রকাশ:  ১৮ মার্চ ২০২৩, ২০:২০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ডেল্টা হেলথ কেয়ার, রামপুরা লিমিটেডের ২০১২-১৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি কুক্ষিগত করে লুটপাটের বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছে বিনিয়োগকারীরা।

গত ১৩ মার্চ জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালে হাসপাতালের আদলে নির্মিত ভাড়া ভবনে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুস এবং সে সময়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে থাকা ডা. মো. সাইফুল ইসলাম সেলিম প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সময়ে নানা রকমের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

‘মোট ৯৬ জন বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগকৃত ১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ও প্রতিষ্ঠানের অর্জিত আয় ২ কোটি ৫২ লাখ ৯৫ হাজার ৯২৬ টাকা এবং বকেয়া প্রায় ৬ কোটি ৬১ লাখ ৫১ হাজার টাকাসহ মোট প্রায় ১৯ কোটি ৯২ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩ টাকার হিসাব চাইলে ‘‘বাহানা’’ করে কালক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে একটি ইন্টারন্যাশনাল অডিট করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক চেয়ারম্যান ও পরবর্তী ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেল্টা লিমিটেড ও ডেল্টা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালকে ইন্টারনাল অডিটের জন্য একটি চিঠি দেয়। তখন ডেল্টা লিমিটেড ও ডেল্টা ফার্মার অডিট টিম ডেল্টা হেলথ কেয়ার, রামপুরা লি. ইন্টারনাল অডিট করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০২১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর অডিট টিম একটি রিপোর্ট দেয়। সেই রিপোর্টে চেয়ারম্যান ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুস ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. সাইফুল ইসলামের সময়কালে অর্থ আত্মসাতের কিছু চিত্র ফুটে উঠেছে।’

সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

২০১৬-১৭ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত হাসপাতাল কালেকশন থেকে ৮৭ লাখ ৩ হাজার ৫৮৮ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ২০১৪-২০১৯ অর্থবছর পর্যন্ত রেনোভেশনের নামে অগ্রিম হিসাবে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬১ টাকা দেখানো হয়েছে, যার কোনও ব্যাখ্যা বা বিল ভাউচার দেখাতে পারেনি। ফলে তারা দুজন মিলে টাকাগুলো আত্মসাত করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। ২০১৪-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির নামে অগ্রিম হিসাবে ১৩ লাখ ৭ হাজার ৭৮২ টাকা দেখানো হয়েছে, যার কোনও ব্যাখ্যা বা বিল ভাউচার দেখাতে পারেনি। ফলে তারা দুজন মিলে টাকাগুলো আত্মসাত করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। ২০১৪-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত হাসপাতালের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়ে। যে কারণে স্টাফদের চার মাসের বেতন বকেয়া থাকা সত্ত্বেও স্টাফদের অগ্রিম বেতন বাবদ ২ লাখ ১১ হাজার ৮৬০ টাকা অডিট রিপোর্টে দেখিয়ে হিসাব মেলানো হয়েছে। পরবর্তীতে তারা যার কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। এসব টাকা তারা আত্মসাত করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ কোটি ৫৫ লাখ ১০২ টাকা অডিট রিপোর্টে মেলানো সম্ভব হয়নি। যা অডিটরস্ রিপোর্টে উল্লেখ আছে। এই টাকা তারা দুজন মিলে আত্মসাত করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। ২০১২-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত শেয়ারমানি ১ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা না করে আত্মসাত করেছেন। শট টার্ম লোন ৪৩ লাখ টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা না করে আত্মসাত করেছেন। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম অব্যাহতি গ্রহণের পূর্বে ক্যাশ ইন হ্যান্ড ২৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা দেখালেও পরবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বুঝিয়ে দেননি। সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাত করেছেন। এরপর থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি তারা তাদের মতো করে অদ্যবদি পরিচালনা করে আসছে, যার কোনও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই।

বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে চেয়ারম্যান ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুস ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম অর্থ আত্মসাৎ করে প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীদের ও রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। স্বাস্থ্যসেবার নামে এদেশের জনগণ ও বিনিয়োগকারীদেরকে ঠকিয়ে অর্থ আত্মসাত করার প্রতিবাদ করলে তারা দুজন প্রতিষ্ঠানে একটি গ্রুপিং করে অভিযোগকারীকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। অভিযোগকারী তখন হাতিরঝিল থানায় (জিডি নং ১১১৬) সাধারণ ডায়েরি করেন।

বর্ণিত বিষয়ের আলোকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে দুদক চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই অভিযোগকারী।

দুদক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close