পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জির পদত্যাগ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসরকারের মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায়। শুক্রবার মন্ত্রীত্বের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন রাজীব।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ইতোমধ্যে সেই পদত্যাগপত্রটি পোস্ট করেছেন পশ্চিমবঙ্গের ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীব। জানিয়েছেন, মমতাকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি পদত্যাগের একটি কপি পাঠিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কেও।
সম্পর্কিত খবর
ভারতের সাংবিধানিক প্রথা অনুযায়ী, সাধারণত কোনও মন্ত্রী পদ ছাড়লে মুখ্যমন্ত্রীই সে কথা রাজ্যপালকে জানান; কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজীব নিজেই রাজ্যপালকে বিষয়টি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে রাজভবনে ধনখড়ের সঙ্গে ‘সৌজন্য সাক্ষাত’ করতেও যান তিনি।
এদিকে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ শেষে রাজীব বেরিয়ে যাওয়ার পরই রাজ্যপালের কাছে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে সত্ত্বর সরানোর অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তার সেই অনুরোধ গ্রহণ করেছেন রাজ্যপাল।
রাজীবের পদত্যাগপত্র পেয়েছেন বলে এক টুইটবার্তায় জানিয়েছেন ধনখড়। রাজভবনে রাজীবের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি এবং ভিডিয়ো টুইট করেছেন তিনি।
শুভেন্দু অধিকারী, লক্ষ্মীরতন শুক্লাসহ এই নিয়ে তিন জন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার থেকে ইস্তফা দিলেন। শুক্রবার পদত্যাগের প্রেক্ষিতে তার বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার জল্পনা নতুন করে জোর পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গণে; কারণ ঘটনাচক্রে শনিবারই বঙ্গসফরে আসার কথা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির।
রাজীব বন্দোপাধ্যায়ের মন্ত্রিত্ব ছাড়ার প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘এমনটাই প্রত্যাশা করছিলাম আমরা। মন্ত্রিসভার বৈঠকে যাচ্ছিলেন না বেশ কিছু দিন ধরেই। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিল। দলে থেকেও কোনও কাজ করছিলেন না।’
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যাচ্ছেন, তাতে তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে না। উনি যে যাবেন তা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। ডোমজুড় কেন্দ্রে রাজীবকে ছাড়াই বড় ব্যবধানে জিতবে তৃণমূল।’
গত ১৯ ডিসেম্বর অমিত শাহের উপস্থিতিতে মেদিনীপুরের সভায় শুভেন্দু অধিকারী পদ্মশিবিরে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দলের বিরুদ্ধে প্রকাশে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেন রাজীব। ‘আমরা দাদার অনুগামী’ লেখা পোস্টারও পড়ে হাওড়া এলাকয়। তবে এ নিয়ে দলে কোনও সাফাই দেওয়ার পরিবর্তে দলের নানা বিষয় নিয়ে অসন্তোষের কথাই বরাবর জানিয়ে এসেছেন তিনি। প্রকাশ্য মঞ্চ থেকেও একাধিক বার ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা গেছে তাকে।
বিষয়টি নিয়ে রাজীবের সঙ্গে আলোচনাতেও বসেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটকৌশলী নেতা হিসেবে পরিচিত প্রশান্ত কিশোর একাধিকবার তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন; কিন্তু তার পরেও মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেখা যায়নি তাকে, বরং ফেসবুক লাইভ করে সম্প্রতি আর কাজ করতে পারছেন না বলে জানান তিনি। রাজীবের তৃণমূল ছেড়ে চলে যাওয়া যে সময়ের অপেক্ষা, তখন থেকেই এ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়।
তবে মন্ত্রীত্ব ছাড়লেও এখন পর্যন্ত বিধায়ক পদ ছাড়েননি রাজীব। এখনও তৃণমূলেই রয়েছেন তিনি। তবে নিকট ভবিষ্যতেই সতীর্থ শুভেন্দু অধিকারীকে তিনি অনুসরণ করছেন বলে ধারণা করছেন রাজনীতিরা। রাজীবকে ইতিমধ্যে দলে স্বাগত জানিয়ে রেখেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
সূত্র: আনন্দবাজার
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস